পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ইতিহাস
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৯-১২-১৯৭১ খ্রি: তারিখে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে শ্রী ফণী ভুষণ মজুমদার যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে এনাম কমিটির মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ সৃজন করা হয়। যথা: স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।
১৯৮২ সালে সৃষ্ট পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কার্যক্রম পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, সমবায় সমিতি গঠন ও পরিচালন, সমবায় বিপণন, বীমা ও ব্যাংকিং-কে উৎসাহ দান, পল্লী অঞ্চলে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জনগণের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া, মানব সম্পদ উন্নয়ন তথা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা, দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত এবং স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ বিভাগ নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, কার্যক্রম গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে থাকে। বাংলাদেশ মূলতঃ একটি গ্রাম প্রধান দেশ। এ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% গ্রামে বাস করে এবং তাদের অধিকাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল। ফলে পল্লী ও পল্লীর জনগণের উন্নতির উপরই যে দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি নির্ভর করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পল্লী অঞ্চলে উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের সময়ে যে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক দেশব্যাপী গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমই তার প্রকৃষ্ট প্রমান। এ বিভাগ সৃষ্টির পর এর কর্মপরিধি ও বাজেট অনেক গুণ বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন (১) সমবায় অধিদপ্তর; (২) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি); (৩) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা, (৪) পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়া; (৫) বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ; (৬) পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ); (৭) ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ); (৮) বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি: (মিল্ক ইউনিয়ন); (৯) বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি: (বিএসবিএল) এবং (১০) বাংলাদেশ জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনে ০৩টি একাডেমী যথা:- (১) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা; (২) পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়া এবং (৩) বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী ও সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ ও পল্লী উন্নয়নে নিরীক্ষামূলক গবেষণা কার্যে নিয়োজিত রয়েছে। একাডেমীসমূহে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারে নবনিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ন্যায় গুরু দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে আসছে। উক্ত একাডেমীসমূহে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার, ওয়ার্কসপ প্রভৃতি অত্র বিভাগের মাধ্যমে আয়োজন করা হয়। এছাড়া, একাডেমীসমূহের যাবতীয় প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যাদি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে এ বিভাগকেই সম্পন্ন করতে হয়। তাছাড়া, আরও ৩টি প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে। যথা:- (১) পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর (নির্মাণাধীন) (২) শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, জামালপুর (নির্মাণাধীন) এবং (৩) শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, যশোর (প্রস্তাবিত)।
কার্যাবলি
১। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সমিতি গঠন এবং প্রয়োজনীয় কর্মসূচি/প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
২। পল্লী উন্নয়নভিত্তিক নীতিমালা, সমবায় আইন ও বিধি এবং তৎসংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন;
৩। ক্ষুদ্র ঋণ, ক্ষুদ্র সঞ্চয়, সমবায়ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প স্থাপন, সমবায় ব্যাংকিং, সমবায়ী কৃষি খামার সৃষ্টি ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, দুগ্ধ ও অন্যান্য সমবায়ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি;
৪। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ;
৫। পল্লী উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান তৈরি, সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকরণ;
৬। পল্লী উন্নয়নভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন;
৭। প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন কৌশল ও মডেল উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ;
৮। সমবায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন;
৯। পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচিতে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ।